নতুন সময়২৪.কম | আপডেট: 9:45 PM, August 26, 2024
মহাখালী সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুনের নেতৃত্ব ছিল যারা!
ডায়মন্ড রেজা-
মহাখালী সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নেতৃত্ব ছিল কালা নাছির কমিশনার। নাছির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য চিহ্ন সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এসব অপকর্মের সিসিটিভির ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, নাসির এসব অপকর্মের জন্য কড়াইল বস্তির বেশ কিছু আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করেন।
জানা যায়, চুরি, ডাকাতি, লুটপাট অগ্নিসংযোগ, নৈরাজ্য, ভাঙচুর চালাতে দলীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেন নাছির কমিশনার। তার দাবি- এই সময়ে এসব অপকর্ম করলে ছাত্র-জনতা ও বিএনপি জামাতের ঘাড়ে পড়বে। এজন্য এসব অপকর্মে কাজে লাগান কড়াইল বস্তি বেলতলা ইউনিটের ২০নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি নায়েব আলী শামীম ও জুনায়েদ মনিরকে। এরা অত্র এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানুষের ঘরবাড়ি দখল অরাজকতা, জ্বালাপোড়াও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল।
এই চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন- আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মীরা। তারা হলেন- মোঃ সোহাগ আকন্দ, মোঃ সানোয়ার, মোঃ মিজান, মোঃ রাজু, আল আনাস, মোহন, ফরহাদ, জুয়েল, কাঞ্চন, মোঃ সাইফুল, মোঃ রাজু, মোঃ সাজুসহ অনেকেই।
জানা যায়, যদিও এসব সন্ত্রাসীরা রফিক কাজী নামের সাবেক এক বিএনপি নেতাকে দোষারোপ করছেন। এর আগে রফিক বিএনপির ওয়ার্ডের নেতা ছিল। বিএনপি করার অপরাধে তার বাড়ি দখল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ছেলে মেয়েদের নির্যাতনসহ নানান ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। পরে রফিককে জোর করে তাদের দলে নেন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাগ চান। এরপর এ চক্রটি রফিককে সেবক লীগের কমিটিতে ওয়ার্ডের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ দেন। রফিকের অনুমতি ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের এমন পদ দেওয়াই সে ৩ দিন পর পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর রফিকে জামাত-বিএনপি বলে আবারও হামলা করে এলাকা থেকে বের করে দেয়।
এই বিষয়ে রফিক কাজী বলেন, আমাকে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অনেক নির্যাতন করেছে। নিজেরা আমার নাম কমিটিতে রেখে আমার নামে পোস্টার করে অসৎ উদ্দ্যেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল। জোর করে ছবি তুলিয়েছে যাতে করে আমি বিএনপি থেকে বাদ পড়ি। তারপরও আমি ওদের সঙ্গে মিশে দলীয় নির্দেশনা মেনে কাজ করেছি।
এদিকে মহাখালী এলাকা ও কড়াইল টিএন্ডটি বস্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা সবাই শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট, নারী নির্যাতন, শিশু পাচার, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মের হাজার হাজার অভিযোগ।
সূত্র জানায়, এরা মূলত নাছির কমিশনারের ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। আজ থেকে ১০ বছর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাখালী কাঁচাবাজার গলিতে নাছির কমিশনারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করায় বৈশাখে টেলিভিশন, নিউজ২৪ এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সংবাদ কর্মীদের গুলি করে। এরপর থেকে এরা মহাখালী এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে আলোচনায় আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নায়েব আলী শামীম ও জুনায়েদ মনির ১৬ বছর ধরে নাছির কমিশনারের বিশ্বস্ত। এজন্য কড়াইল বেলতলা বস্তি নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এদের নিয়োগ করে কমিশনার। তারা এই এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এলাকায় নাছির কমিশনার প্রভাবশালী হওয়ায় তার ভয়ে কেউ এদের বিরুদ্ধে এরআগে রুখে দাঁড়াতে পারিনি।
কড়াইল বেলতলা বস্তির ছদ্মনাম লায়লা নামের এক নারী জানান, ‘আমি সুন্দর হওয়ায় নায়েব আলী আমার স্বামীকে মারধর করে এলাকা ছাড়া করে। এরপর সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি রাজি না হলে সে আমাকে জোর পূর্ব বিয়ে করে। এই ঘটনার পর আমি তার নামে একটি মামলা করেছি।’
লায়লা বলেন, আমার মত অসংখ্য মেয়ে ও সাধারণ মানুষের জীবন এরা ধ্বংস করেছে। কেউ বিচার পাইনি। পুলিশের কাছে গেলে এবং কমিশনারের কাছে গেলে উল্টো আমাদের দোষারোপ করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বনানী থানা পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গেল মাসের ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার ৩ টা ৫০ মিনিটের দিকে মহাখালী সেতুভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে একই সময়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই আগুনে নেতৃত্বে ছিল নাছির কমিশনার ও তার সন্ত্রাসী দল। আগুনের ঘটনাটি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার উপর দায় চাপাতে এমন সিধান্ত নেয় নাছিররা।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ও বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, ১৮ জুলাই ৩ টা ৫০ মিনিটের দিকে মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও সেতুভবনে একই সময়ে আগুন লাগাতে নায়েব আলী, জুনায়েদ, সোহাগ ও সানোয়ারকে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করতে বলে নাছির। এর আগে তারা ১৫ এবং ১৬ জুলাই সন্ধার পর নাছির কমিশনারের নিজ অফিসে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সেতুভবনে আগুন দেওয়ার জন্য সোহাগ ও সানোয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর মহাখালী দুর্যোগ ভবনে আগুন দেওয়ার জন্য নায়েব আলী ও জোনায়েদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা পৃথক ভাবে এসব দায়িত্ব পালন করে।
মহাখালী এলাকায় বসবাসরত ও তিতুমীর কলেজের ২১- ২২ বর্ষের শিক্ষার্থী রবিন হোসেন বলেন, ‘নায়েব আলী ও জুনায়েদ আমাদের চোখের সামনে মহাখালী সেতু ভবনে আগুন দিয়েছে। আমরা নিষেধ করার সত্ত্বেও তারা থামেনি।’
মহাখালী টিএন্ডটি মহিলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিশা বলেন, আমরা যখন বৃহস্পতিবার ২৮ জুলাই বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তায় আন্দোলন করি। ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতা সোহাগ ও সানোয়ারকে দেখতে পায়। তারা জানান- তাদের ভাতিজা আন্দোলন করছে খুঁজতে এসছে। একটু পরে দেখি সেতু ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে তারা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। অনেকেই ভেবেছে শিক্ষার্থীরা আগুন লাগিয়েছে কিন্তু সেটা না। আমরা দেখলাম শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর আমাদের এলাকায় অধিকাংশ আওয়ামী লীগের লোক লুটপাট চুরি-ডাকাতি ও নৈরাজ্য চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করে।
এসব বিষয়ে মহাখালী ২০নং ওয়ার্ডে বসবাসরত একাধিক ব্যক্তি জানান, ৫ আগস্ট যখন সরকার পদত্যাগ করে ঠিক সেই দিন রাত্রে নাছির কমিশনারের নেতৃত্বে মহাখালী এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চুরি, ডাকাতি, লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসবের নেতৃত্ব ছিল নাসির কমিশনারের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। তাদের দাবি- এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নতুন সময়/কেকে